October 6, 2024, 3:53 am

সংবাদ শিরোনাম
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জামায়াত নেতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিনের স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে হলে সশস্ত্র ট্রেনিং এর প্রয়োজন। বৈষম্য বিরোধী অভিভাবক ছাত্র শ্রমিক জনতা ঐক্য কমিটির (পর্ব- ৪) ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে গড়তে হলে সংস্কার প্রয়োজন=== বৈষম্য বিরোধী অভিভাব ছাত্র শ্রমিক জনতা ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে অদ্ভুতুরে কাণ্ডকীর্তি ভোলা বোরহানউদ্দিনে প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকগণের ১০ম গ্রেডের দাবিতে মানববন্ধন শারদীয় দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের লক্ষে বগুড়ায় বিএনপির মতবিনিময় সভা! লক্ষ্মীপুরে কুমিরের আতঙ্কে এলাকাবাসী সাংবাদিক পুত্র আবির হোসেন অনন্ত’র জন্মদিন আজ বিল্লাল হুসাইন ক্ষমতা! নাকি আড়ালে ছিলো ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার?

পুরোনো অটোরিকশা মেরামত করে আরও ছয় বছর চালাতে চাইছেন মালিকরা

পুরোনো অটোরিকশা মেরামত করে আরও ছয় বছর চালাতে চাইছেন মালিকরা

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

নয় বছর মেয়াদের অটোরিকশা ১৫ বছর চালানোর পর এখন আরও ছয় বছর মেয়াদ বাড়াতে চাইছেন মালিকরা, যদিও চালকরা এসব অটোরিকশাকে ‘চলন্ত বোমা’ বলছেন। মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে ঢাকা মহানগর অটোরিকশা মালিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, অটোরিকশাগুলো এখনও ভালো অবস্থায় আছে। খারাপ হয়েছে ইঞ্জিন আর গ্যাস সিলিন্ডার। গ্যাস সিলিন্ডারের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে, ইঞ্জিনেরও কর্মক্ষমতা কমেছে। এজন্য আমরা এগুলো ফেলে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন লাগাব।

তিনি বলেন, এভাবে ইঞ্জিন ও গ্যাস সিলিন্ডার পরিবর্তন করে গাড়ি চালানো গেলে তাদের সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা খরচ হবে। আর নতুন গাড়ি কিনতে গেলে লাগবে প্রায় সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা। এজন্য আমরা চাইছি পুরোনোগুলোকেই মেরামত করে চালাতে। নতুন অটোরিকশা আমদানি করতে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার মতো লাগবে, যেটা এই মুহূর্তে মালিকদের উপর অনেক চাপ তৈরি করবে। নয় বছর মেয়াদ ধরে ২০০২ ও ২০০৩ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে অনুমোদন দেওয়া ২৬ হাজারের বেশি অটোরিকশার মেয়াদ ইতোমধ্যে তিন দফায় ছয় বছর বাড়ানো হয়েছে। ইঞ্জিন ও গ্যাস সিলিন্ডার প্রতিস্থাপন করে মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে গত বছরের ২২ নভেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে অটোরিকশা মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদ।

গত ২৬ অক্টোবর সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের ৪১তম বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।অটোরিকশার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ব্যবস্থা নিতে গত ২ নভেম্বর বিআরটিএতে চিঠি পাঠায় সড়ক বিভাগ। বিআরটিএ ১৩ নভেম্বর বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে তাদের মতামত চায়। অটোরিকশাগুলোর মেয়াদ যাতে বাড়ানোর সুপারিশ না করা হয় সে দাবিতে গেল সপ্তাহে বুয়েটে বিক্ষোভ করে যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রধানের কাছে স্মারকলিপি দেন অটোরিকশা চালকরা।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্যপরিষদের সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন দুলাল বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এসব অটোরিকশা চালাতে রাজি নন চালকরা।

এর আগে ছয় বছর মেয়াদ বাড়ানোর পর এগুলোর বয়স ১৫ বছর হয়ে গেছে। আবার চাইতেছে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য। এইটা হলে ২১ বছর হবে। এই পুরোনো গাড়ির বোতল বিস্ফোরণে এর আগেও চালক-যাত্রী মারা গেছে। আবার কেউ মারা গেলে এর দায় কে নেবে? ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় ৬০ হাজার অটোরিকশা চালকের কেউ এই ‘চলন্ত বোমা গাড়ি’ চালাইতে চায় না।

তিনি বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ অটোরিকশার গ্যাস সিলিন্ডার যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটে মানুষ মারা যেতে পারে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে এ ধরনের কয়েকটি ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এখন যেসব অটোরিকশা আসছে সেগুলো আকারে বড় হওয়ায় আগের ওই সব অটোরিকশার গ্যাস সিলিন্ডার বাজারে না মেলায় সেগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়নি বলে জানান তিনি। অটোরিকশার মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের হাতে নেই।

বিআরটিএকে বলা হয়েছে, বুয়েটের মতামত নেওয়ার জন্য। বুয়েটের মতামত নিয়ে বিআরটিএ সে অনুযায়ী কাজ করবে। বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সড়ক নিরাপত্তা শাখার পরিচালক শেখ মো. মাহবুব ই রব্বানীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

মাহবুব ই রব্বানী বলেন, অটোরিকশাগুলো চলাচলের যোগ্য কি না তা জানতে বুয়েটের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। এগুলোর পারফরমেন্স এখন কেমন, ইঞ্জিন পরিবর্তন করলে কেমন পারফরমেন্স দেবে, সামগ্রিক বিষয়গুলো পরীক্ষা করে বুয়েট আমাদের একটা প্রতিবেদন দেবে। তারা যদি বলে মেয়াদ বাড়ানো যাবে তাহলে আমরা স্টেপ নেব।

আর তারা যদি বলে যাবে না, তাহলে আমরা তা করব না। বুয়েটের প্রকৌশলীরা পক্ষে মত দিলে প্রতিটি অটোরিকশা বুয়েট, চুয়েট ও এমআইএসটিতে আলাদা পরীক্ষা করে নবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ এহসান বলেন, পরীক্ষার পরেই জানা যাবে এগুলোর মেয়াদ বাড়ানো যাবে কি না। যে ইঞ্জিন আনবে সেটা আগের ইঞ্জিনের প্রতিস্থাপক কি না, একই ধরনের ইঞ্জিন হলে কাঠামোতে তা বসানোর ব্যবস্থা আছে কি না সে বিষয়গুলো দেখতে হবে।

তিনি বলেন, প্রথমেই দেখতে হবে কাঠামোতে আগে যে ইঞ্জিন ছিল, নতুনভাবে সেই ইঞ্জিনই বসানো হচ্ছে কি না। যদি আগের চেয়ে বেশি শক্তির ইঞ্জিন বসিয়ে দেয় তাহলে প্রথমেই কাঠামোকে বেশি জোরের মধ্যে ফেলে দেওয়া হবে, যেটার জন্য সে ডিজাইনড না।

এ ধরনের ব্যাপার হলে নতুন করে নবায়ন করা যাবে না। ভারতের বাজাজ মোটর্সের তৈরি এসব অটোরিকশা বাংলাদেশে আমদানি করে উত্তরা মোটর্স লিমিটেড। ভারতের বাজাজ মোটর্সের বরাত দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা উৎপল সাহা বলেন, ১০ বছরের বেশি পুরোনো হলে অটোরিকশাগুলোর পরিবেশ দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়।

এ কারণেই নয় বছর আয়ুষ্কাল ধরা হয়। বাজাজ কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, এগুলোর আয়ুষ্কাল ৯ বছর। সর্বোচ্চ ১০ বছরের পর তা আর অনুমোদন করেন না তারা।

কারণ এরপর এগুলোর পরিবেশ দূষণের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। এসব চিন্তা করেই তারা নয় বছর পর্যন্ত আয়ুষ্কাল ধরে। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা বলেন, এসব অটোরিকশার বেশিরভাগই আর নবায়ন করার মতো অবস্থায় নেই। ইঞ্জিন ও গ্যাস সিলিন্ডার বদলে দেওয়ার ধারণাও ঠিক নয়। এসব অটোরিকশার চেসিস তৈরি হয়েছে এঙ্গেল বার দিয়ে। বডি টিনের তৈরি। ১৫ বছর পর এই অটোরিকশাগুলোর চেসিস-ফ্রেম কোনো কিছুই আর ঠিক নাই। এগুলো ঝুরঝুরে হয়ে গেছে। এসব ইঞ্জিন লাগাতে গেলে ফ্রেম পরিবর্তন করতে হবে। এটা করলে চেসিস নম্বরও থাকবে না। চেসিস নম্বর ছাড়া তো গাড়িই থাকবে না।

ঢাকায় চলাচলকারী ১৩ হাজার ৬৫২টি অটোরিকশার মধ্যে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ১৫ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে পাঁচ হাজার ৫৬১টির। বাকিগুলোর মেয়াদ শেষ হবে আগামি বছর। আর চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত ১৩ হাজার অটোরিকশার মধ্যে সাত হাজার ৪৫৯টির মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ বছর। ২০০২ সালে সাড়ে পাঁচ হাজার এবং ২০০৩ সালে আরও সাড়ে সাত হাজার অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়।

এ ছাড়া মিশুকের প্রতিস্থাপন হিসেবে আরও ৬৫২টি অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়। সে সময় অটোরিকশাগুলোর বয়সসীমা ধরা হয় নয় বছর। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সাড়ে পাঁচ হাজার এবং ২০১২ সালের ডিসেম্বরে সাড়ে সাত হাজার অটোরিকশার মেয়াদ শেষ হয়। তার আগেই ২০১০ সালে অটোরিকশার মেয়াদ বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করে মালিক সমিতি। তাদের দাবিতে সাড়া দিয়ে সরকার দুই দফায় এক বছর করে এসব অটোরিকশার বয়স দুই বছর বাড়ায়। এরপর ২০১৩ সালে বাড়ানো হয় চার বছর।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর